১। যেহেতু সমাজে বিভিন্ন ধরনের মানুষের অস্তিত্ব দেখা যায়, তাই স্বাভাবিকভাবেই তাদের মানবিক সামর্থ্যও স্থান, কাল, পাত্রভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। প্রতিটি মানুষের মাঝে দুটি শক্তি কাজ করে যার উপর ভিত্তি করেই তার যাবতীয় সক্রিয়তা ও নিষ্ক্রিয়তা নির্ধারিত হয়। একটি হলো চালিকা শক্তি, যা মানুষকে নতুন নতুন কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। আরেকটি হলো সংযত হওয়ার শক্তি- যা মানুষকে অন্যদের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করে।
ধৈর্য হলো একটি ইতিবাচক গুন যা মানুষকে সক্রিয় হওয়ার মত চালিকা শক্তি প্রদান করে। আবার একইসঙ্গে, ধৈর্য মানুষকে সংযম শিক্ষা দেয়। যার ফলে মানুষ নিজের স্বার্থহানিকর কোনো কাজ করে না, একইসঙ্গে অন্যের ক্ষতিসাধন করা থেকেও বিরত থাকে।
দেখা যায়, যখন নিজের স্বার্থে কোনো কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়, তখন কিছু কিছু মানুষের ধৈর্য যেন অনেক বেড়ে যায়। অথচ অনিষ্টকর বা অবৈধ কোনো কাজ থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে এ মানুষগুলোর ধৈর্য খুব একটা কার্যকর থাকে না। ফলে তারা নামাজ, রোজা বা হজ্ব পালন করার ক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি ধৈর্য ধারণ করতে পারে। কিন্তু ইচ্ছের দাসত্ব থেকে মুক্ত থাকার বিষয়ে, কিংবা হারাম সব কাজ করা থেকে বিরত থাকার বিষয়ে ততটা ধৈর্য ধরতে পারে না।
এর বিপরীতে, কোনো কোনো মানুষের আবার নিষিদ্ধ জিনিস থেকে বিরত থাকার বিষয়ে ব্যপক ধৈর্য দেখা যায়। অথচ, আল্লাহর হুকুম পালনে এবং ইবাদত করার ক্ষেত্রে তাদের তেমন একটা ধৈর্যশীল পাওয়া যায় না। আবার কিছু মানুষ আছে, যাদের ইবাদত পালনে কিংবা খারাপ কাজ থেকে সংযত থাকা- কোনো বিষয়েই কোনো ধৈর্য কাজ করে না। তবে, সর্বোত্তম মানুষ তারাই যারা উভয়ক্ষেত্রেই ধৈর্য ধারণ করতে পারে।
(প্রকাশিত বই “ধৈর্য: জান্নাতে যাওয়ার পথ’ থেকে)
প্রকাশনায়: মুসলিম ভিলেজ।
২। Reclaim Your Heart পাশ্চাত্যে একটি বেস্ট সেলার বই। সেখানে এর বহু অনুমোদিত এবং অনুনোমোদিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। বইটি অনুদিতও হয়েছে বহু ভাষায়। এটি মূলত: ইসলামি দৃষ্টিকোণ হতে লিখিত মোটিভেশনাল বা Self- help ধাচের একটি বই। তবে এতটুকুনের মধ্যে এর পরিচিতি সীমাবদ্ধ রাখাটা বইটির প্রতি অবিচার করা হবে। এর আবেদন আরও ব্যাপক। এটি তার পাঠককে সমকালীন প্রেক্ষাপটে জীবন সম্পর্কে ইসলামের শ্বাশত শিক্ষার সাথে পরিচিত করে।
পাঠককে আত্মজিজ্ঞাসায় ও নিজ জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তনে উদ্বুদ্ধ করে। Reclaim Your Heart মূলত: পাশ্চাত্য পরিবেশে একজন মুসলিম মহিলা কি ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন, কি তার কারণ এবং তার সমাধানই বা কি- এ মৌলিক প্রশ্নগুলির উত্তরের খোঁজেই এ বই লেখা। পাশ্চাত্য পেক্ষাপটে লেখা হলেও এ বইয়ের আবেদন সার্বজনীন। সব সমাজের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বয়সের মানুষের জন্যই এ বইয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে।
৩। উমার ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “তোমরা যদি প্রকৃতভাবেই আল্লাহ্ তা’আলার উপর নির্ভরশীল হও তাহলে পাখিদের যেভাবে রিযিক দেয়া হয় সেভাবে তোমাদেরকেও রিযিক দেয়া হবে। এরা সকালবেলা খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যা বেলায় ভরা পেটে ফিরে আসে।” – জামে আত তিরমিযি- ২৩৪৪ ইসলাম শুধু কতিপয় ইবাদতের নাম নয়। ইসলাম কেবল সালাত, সিয়াম, হজ্জ, যাকাতে সীমাবদ্ধ নয়। ইসলাম হল ইবাদত, ধর্ম, সামাজিকতা, চারিত্রিকতা, অর্থনীতি এবং রাজনীতি সম্বলিত পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। বর্তমানে আমাদের সমাজে অনেকে সালাত সিয়াম-পালন করেন, কিন্তু মু’আমলাত তথা ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেন বিষয়ে ইসলামের বিধান জানার এবং মানার চেষ্টা করেন না। এটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয় না। ‘রিযক’- বিষয়ে এই বইতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বইটি সংক্ষিপ্ত হলেও প্রায়ই সকল আলোচনা এখানে এসেছে। প্রথমে ‘ইসলামে উপার্জনের মূলনীতি’ সহজ ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। অতপর হারাম লেন-দেন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
৪। যখন আখেরী জামানা আসবে, তখন কঠিন পরীক্ষা বা ফেতনার সম্মুখীন হতে হবে। মানব জাতির প্রায় সবাই এই পরিক্ষায় ব্যর্থ হবে। যারা ব্যর্থ হবে তারা । খুব অল্প সংখক মানুষ এই পরিক্ষায় সফল হবে। যারা ব্যর্থ হবে তারা জাহান্নামে যাবে। কিন্তু আল্লাহ’র রাসূল (সাঃ) বলেছেন, কিছু আলামত ঘটবে যা থেকে প্রতীয়মান হবে যে, আপনারা আখেরী জামানায় বাস করেছেন। এবং এটাই এই বইয়ের আলোচ্য বিষয়।
৫। আতা ইবনে রাবাহ (র.) বলেন, “যখন তোমরা কথা বলবে, তখন কুরআন ও সুন্নাহকে নিয়েই কথা বলবে। মানুষকে ভালো কাজের আদেশ দেবে, মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে। নিজেদের জীবন-জীবিকা নিয়েও আলোচনা করতে পারো। এর বাইরে যারা অপ্রয়োজনীয় ও বেহুদা আলাপ করছো, তারা কি ভুলে যাও যে, তোমাদের দুই কাঁধে কিরামুন কাতিবিনের মতো দুজন ফেরেশতা বসে আছেন। তারা তোমাদের প্রতিটি কথা ও কাজকে লিখে রাখছেন। তোমাদের প্রতিটি খারাপ কথা ও কাজও তারা হিসেব কষে লিখে রাখছেন, এ বিষয়টি কি তোমাদেরকে লজ্জিত করে না? শেষ বিচারের দিনে আল্লাহর সামনে প্রতিটি বাজে কাজের ও কথার জন্য জবাব দিতে হবে। এই সত্যটা সবসময় মনে রাখবে, নিজের মনে আওড়াবে। তাহলে দেখবে, তোমার অপ্রয়োজনীয় ও বাজে কথা ও কাজের পরিমান কমতে শুরু করবে।”
বণু তামিম গোত্রের একজন ব্যক্তি বলেছিলেন, “আমি আর রাবি বিন খাইসামের (র.) সাথে ১০ বছর সময় কাটিয়েছি। এই দীর্ঘ সময়ে মাত্র দুবার আমার ব্যক্তিগত কোনো বিষয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন। আর কখনোই এ জাতীয় কথা বলেননি। এর মধ্যে একবার তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, “তোমার মা কি এখনো জীবিত আছেন?” আর দ্বিতীয়বার তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, “তোমাদের এলাকায় আনুমানিক কতগুলো মসজিদ আছে?” এর বাইরে তিনি কখনো দ্বীনি আলাপ বহির্ভুত আমার ব্যক্তিগত কোনো বিষয়ে আর কোনো প্রশ্ন করেননি।
সুবহান আল্লাহ, আমাদের সালফে সালেহীনরা কতটা উঁচু মানের জীবন যাপন করতেন।
তথ্যসূত্র: প্রকাশিত গ্রন্থ “হেদায়েতের পথে যত অন্তরায়)
Reviews
There are no reviews yet.